আমরা কিভাবে দেখতে পাই, চোখের ক্রিয়া, চোখের ত্রুটি ও তার প্রতিকার, স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত।
আসসালামু আলাইকুম সবাই। আশা করি ভালো আছেন। আজকে আমরা চোখের ক্রিয়া ও আমরা কিভাবে দেখতে পাই, চোখের বিভিন্ন অংশের গঠন ও কাজ, চোখের গঠন চিত্র, আমরা কিভাবে চোখের সাহায্যে আলোকিত বস্তু দেখতে পাই, চোখের সমস্যা, চোখের গঠন ও কার্যাবলী, কাছের বস্তু দেখার জন্য কোন লেন্স ব্যবহার করা হয়, চোখের কোন অংশে প্রতিবিম্ব গঠিত হয়, আমরা কোনো বস্তুকে দেখতে পাই কেন? এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
চোখের ক্রিয়া ও আমরা কিভাবে দেখতে পাই?
স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব
আমরা কিভাবে দেখতে পাই তা উপরের আলোচনায় জেনেছি। এখন জানবো স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব সম্পর্কে। অর্থাৎ চোখের কতটুকু কাছ থেকে আমরা কোনো বস্তুকেই স্পষ্ট দেখতে পাই। স্বাভাবিক চোখের খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা সীমাহীন নয়। মানুষ তার চোখের লেন্সে ফোকাস দূরত্ব বাড়িয়ে বা কমিয়ে একটা বস্তুকে সব সময় স্পষ্ট দেখার চেষ্টা করে। কিন্তু লক্ষ্যবস্তু চোখের কাছাকাছি একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে বেশি কাছে এলে আর স্পষ্ট দেখা যায় না। চোখের সবচেয়ে কাছে যে বিন্দু পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুকে খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায়, তাকে স্পষ্ট দৃষ্টির নিকট বিন্দু বলে এবং চোখ থেকে ঐ বিন্দুর দূরত্বকে স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব ধরে নেওয়া হয় । এই দূরত্ব মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়। একজন শিশুর এই দূরত্ব ৫ সেন্টিমিটারের কাছাকাছি এবং একজন স্বাভাবিক বয়স্ক লােকের এই দূরত্ব ২৫ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। দূর বিন্দু চোখ থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থান করে। এ কারণে আমরা বহুদূরের নক্ষত্রও খালি চোখে দেখতে পারি।
আরো পড়ুন : EEE Subject Review | ইইই সাবজেক্ট রিভিও.
চোখের সমস্যা বা ত্রুটি এবং তার প্রতিকার
চোখের ক্রিয়া ও আমরা কিভাবে দেখতে পাই তা আমরা জেনেছি। তােমাদের অনেকের ই চোখের সমস্যা সম্পর্কে ধারণা আছে। এখন আমরা চোখের বিভিন্ন ত্রুটি এবং তাদের প্রতিকার সম্পর্কে আলােচনা করব। আমরা জানি, সুস্থ এবং স্বাভাবিক চোখ “নিকট বিন্দু” (Near point) থেকে শুরু করে অসীম দূরত্বের দূর বিন্দুর মাঝখানে যে স্থানেই কোনাে বস্তু থাকুক না কেন সেটা স্পষ্ট দেখতে পারে। এটাই চোখের স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি। এই স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ব্যাহত হলেই তাকে চোখের দৃষ্টির ত্রুটি বলা হয়। চোখের দৃষ্টির অনেক ধরনের ত্রুটি থাকলেও আমরা প্রধান দুটি ত্রুটি নিয়ে আলােচনা করব। সেই দুটি হলো(ক) হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি (Myopia or shortsightedness)
(খ) দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি (Hypermetropia or farsightedness)
হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি (Myopia)
যখন চোখ কাছের বস্তু দেখতে পায় কিন্তু দূরের বস্তু দেখতে পায় না, তখন চোখের এই জুটিকে হ্রস্বদৃষ্টি বলে। এরূপ চোখের দূর বিন্দুটি অসীম দূরত্ব অপেক্ষা খানিকটা নিকটে থাকে এবং বস্তুকে স্পষ্ট দৃষ্টির ন্যূনতম দূরত্ব হতে আরও কাছে আনলে অধিকতর স্পষ্ট দেখায়। নিম্নলিখিত দুটি কারণে এই ত্রুটি হয়ে থাকে।
১. চোখের লেন্সের অভিসারী শক্তি বৃদ্ধি পেলে বা ফোকাস দূরত্ব কমে গেলে।
২.
কোনাে কারণে অক্ষিগােলকের ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পেলে।
এর ফলে দূরের বস্তু থেকে আসা আলােকরশ্মি চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে প্রতিসরণের পর রেটিনার উপরে প্রতিবিম্ব তৈরি না করে একটু সামনে (F) প্রতিবিম্ব তৈরি করে।নিচের চিত্রে দেখানো হলো। ফলে চোখ বস্তুটি স্পষ্ট দেখতে পায় না।
হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টির প্রতিকার
হ্রস্বদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টি ত্রুটি দূর করার জন্য এমন একটি অবতল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে, যার ফোকাস দূরত্ব হ্রস্বদৃষ্টির দীর্ঘতম দূরত্বের সমান। চশমার এই লেন্সের অপসারী ক্রিয়া চোখের উত্তল পিছনে তৈরি হবে। অর্থাৎ অসীম দূরত্বের বন্ধু থেকে আসা সমান্তরাল আলােকরশ্মি চশমার অবতল। লেন্সের অভিসারী ক্রিয়ার বিপরীত কাজেই চোখের ফোকাস দূরত্ব বেড়ে যাবে বলে প্রতিবিম্বটি আরাে। লেন্স L (নিচের চিত্রে) এর মধ্য দিয়ে চোখে পড়ার সময় প্রয়ােজনমতাে অপসারিত হয়। এই অপসারিত। রশ্মিগুলাে চোখের লেন্সে প্রতিসারিত হয়ে ঠিক রেটিনা বা অক্ষিপট R-এর ওপর স্পষ্ট প্রতিবিম্ব তৈরি করে।
আরো পড়ুন : What is Chemistry.The Scope of Chemistry..
দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি (Hypermetropia)
যখন কোনাে চোখ দূরের বস্তু দেখে কিন্তু কাছের বস্তু দেখতে পায় না, তখন এই জুটিকে দীর্ঘদৃষ্টি বলে সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে এই ত্রুটি দেখা যায়। নিম্নলিখিত দুটি কারণে এই জুটি ঘটে।
১. চোখের লেন্সের অভিসারী ক্ষমতা হাস পেলে অথবা চোখের লেন্সের ফোকাস
দূরত্ব বেড়ে গেলে।
২. কোনাে কারণে অক্ষিগােলকের ব্যাসার্ধ কমে গেলে।
এর ফলে দূর থেকে আসা আলাে সঠিকভাবে চোখের রেটিনাতে প্রতিবিম্ব তৈরি
করলেও কাছাকাছি বিন্দু থেকে আসা আলােকরশ্মি চোখের লেন্সের মধ্য দিয়ে
প্রতিসরণের পর রেটিনার ঠিক উপরে না হয়ে
পিছনে (F) বিন্দুতে মিলিত হয় ।
নিচের চিত্রে দেখানো হয়েছে। ফলে চোখ কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখতে পায় না।
দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টির প্রতিকার
দীর্ঘদৃষ্টি বা দূরদৃষ্টি ত্রুটি দূর করার জন্য একটি উত্তল লেন্সের চশমা ব্যবহার করতে হবে। ফলে কাছাকাছি বিন্দু থেকে আসা আলােকরশ্মি চশমার লেন্সে এবং চোখের লেন্সে পর পর দুইবার প্রতিসারিত হওয়ার কারণে ফোকাস দূরত্ব কমে যাবে এবং প্রয়ােজনমতাে অভিসারী হয়ে প্রতিবিম্বটি রেটিনা (R)-এর উপরে পড়বে।
চোখ ভালাে রাখায় উপায়
আমাদের চোখ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটির যথাযথ যত্ন নেওয়া প্রয়ােজন যেন এটিকে ত্রুটিমুক্ত রাখা যায়। বিভিন্ন উপায়ে আমাদের চোখকে ভালাে রাখা যায়। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি কথা বলা যেতে পারে:(ক) সঠিক পুষ্টি গ্রহণ চোখের জন্য খুবই দরকারি। ভিটামিন এ, সি ও ই সমৃদ্ধ খাবার; ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার, জিংকসমৃদ্ধ খাবার, গাঢ় সবুজ শাকসবজি ও বিভিন্ন ফল চোখের জন্য খুবই ভালাে। এ ধরনের খাবার চোখকে রােগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে। গাজর, মাছ, ব্রকলি, গম, মিষ্টি কুমড়া, হলুদ (যেমন, পাকা পেঁপে, আম) ফল ইত্যাদি বেশি করে খেতে হবে।
(খ) চোখের সঠিক যত্নের জন্য সঠিক জীবনধারণ পদ্ধতি মেনে চলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সারা দিনের পরিশ্রমের পর শরীরের মতাে চোখও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। চোখকে পুনরায় সতেজ করতে সারা রাত ঘুমানাে প্রয়ােজন। তাই এই নির্ধারিত সময় ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপানও চোখের ক্ষতি করে। তাই ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ যদি রােদ থেকে চোখকে রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করতে চায় তাহলে অবশ্যই অতিবেগুনি রশ্মি প্রতিহত করতে পারে এমন সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে। তেল দিয়ে রান্না করার সময় কিংবা ঝালাইয়ের কাজ করার সময় যখন উত্তপ্ত কণা ছিটকে আসে, তখন খুব সাবধান থাকতে হবে। তাছাড়া কেমিক্যাল নিয়ে কাজ করার সময় চোখ রক্ষা করার সেফটি গ্লাস পরা বুদ্ধিমানের কাজ।
(গ) আবছা বা অপর্যাপ্ত আলােতে কাজ করলে সবকিছু চোখের খুব কাছে এনে দেখতে হয়, সেটি চোখের জন্য ক্ষতিকর। ঘরের আলাে পর্যাপ্ত রাখতে হবে যেন পড়তে অসুবিধা না হয়। চোখকে যখন ক্লান্ত মনে হবে, তখন না পড়ে বিশ্রাম নেওয়া ভাল। আমাদের চোখের স্পষ্ট দর্শনের ন্যূনতম দূরত্ব থেকে কম বা বেশি দূরত্বে রেখে বই পড়লে চোখে চাপ পড়ে। তাই সঠিক দূরত্বে রেখে বই পড়তে হয়। তুমি হয়তাে খেয়াল করেছ অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটার ব্যবহার করলে চোখ ক্লান্ত হয়ে। পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘক্ষণ টেলিভিশন দেখা বা কমিপউটার ব্যবহারে চোখের ক্ষতি হয়। তাই এই ক্ষতি থেকে চোখকে রক্ষা করতে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে এবং বিরতি দিয়ে টেলিভিশন দেখা বা কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত।
শেষ কথা